বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬
খাই খাই কোর নাকো বসে যাও চেয়ারে।
রান্নাটা কিরকম টের পাবে এবারে।
রাঁধুনী সে রন্ধনে অতি পটিয়সী,
হাতার বদলে তার হাতে আছে অসি।
আহার ভোজনে যারা নয় তত দক্ষ,
তাদেরও গেলাতে পারে ভক্ষ্য-অভক্ষ্য।
কলমীর রস দেয়,দেয় চায়ে নুন,
খেয়ে দেখো এ চায়ে আছে কত গুন।
দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে রসুন ফোড়ন,
না খেলে যায় না বোঝা এ চীজ কেমন।
পায়েসে আদা বাটা রেসিপি নতুন,
খেলে তবে বুঝবে রাঁধুনীর গুণ,
মুরগীর দুধ আর বাছুরের ডিম,
খেতে বসে মাথাটা যে করে ঝিমঝিম।
পেঁয়াজের রস আর হলুদের বাটা,
বানায় পরোটা দেখি নেই তাতে আটা।
কাঠাঁলের খোসা দিয়ে লঙ্কার বড়ি,
লা-জবাব খাবার রে, আহা মরি মরি।
বালি দিয়ে ডাল আর পাথরের ডালনা,
পাঁচতারা হোটেলে খুঁজলেও পাবে না।
আর কিছু দেব নাকি?শুনে বলি, “বাবারে!
এবার রেহাই দে, দয়া কর আমারে।“
গুড়গুড়ি রাঁধুনীটা একেবারে শিশুরে,
খাওয়াটা কেমন হল বোঝা যাবে ঢেঁকুরে।
গগনে গনগনে মেঘ, রৌদ্রে ফরসা।
বাসস্টপেজে দাঁড়িয়ে ঘামছি, নাহি ভরসা।
ভাংতি ভাংতি টাকা দ্বারা টিকিট কাটা হলো সারা,
রাস্তা জ্যামে ক্ষুরধারা খরপরশা-
কাটিতে কাটিতে সময় বাস আসে না সহসা।
একখানি ছোট কাউন্টার আমি একেলা-
চারিদিকে যানবহন করিছে খেলা।
দূর সিগন্যালে দেখি আকা লাল বাতি মাখা
রাস্তাখানি ধূলোয় ঢাকা অফিসবেলা।
এ স্টপেজে ছোট কাউন্টার আমি একেলা।
হর্ন্ বাজিয়ে বাস চালিয়ে ড্রাইভার আসে দেরী করে!
রেগে যেন মনে হয় চড়াই উহারে।
ফুলস্পীডে চলে যায়, কোন দিকে নাহি চায়,
যাত্রীগুলি নিরুপায়,গাদাগাদি হয়ে ভেতরে-
রেগে যেন মনে হয় চড়াই উহারে।
ঐ কন্ডাক্টার কই যাস কোন বিদেশে?
বারেক ভিড়া গাড়ি স্টপেজে এসে।
যাবি যেথা যাইতে চাস, চাপা দিবি যারে পাস-
শুধু তুই ছিড়ে নে ক্ষনিক হেসে
আমার সোনার টিকিট কাউন্টারেতে এসে।
যত চাবি তত যাত্রী ঠাসাবি বাস ভরে।
জায়গা আছে?- জায়গা নাই, ওঠা ছাদের উপরে।
এতকাল বাস কাউন্টারে সিটের স্বপ্ন নিয়ে ছিনু ভুলে
সেই স্বপ্ন দিলাম তুলে থরে বিথরে-
এখন আমারে ল করুনা করে।
ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে গাড়ি
আগের স্টপেজের প্যাসেঞ্জারে গিয়াছে ভরি।
দ্বিগুন ভাড়া বৃদ্ধি করে কত সিএনজি ঘুরে ফিরে,
শূণ্য বাস কাউন্টারে রহিনু পড়ি-
যাত্রী যা ছিলো নিয়ে গেলো সোনার গাড়ি।
১.
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া 'বিমান' পালকিতে চড়িয়া নারায়ন মুখোপাধ্যায় এর ছোট ছেলে দেবদাস ৫ বৎসর পর বিলেত হইতে দেশে ফিরিতেছে । দেবদাসের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরিয়া গ্রাম জুড়িয়া ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হইয়াছে। পুত্রের দেশে ফিরিবার সংবাদ বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করিতে দেবদাসের মাতা 'কৌশল্যা' টুইটারে টুইট করিলেন 'my son coming soon' , ইহাতে কিঞ্চিত বিপত্তি ঘটিয়া গেল ! অনেক 'গণ্ডমূর্খ' ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কৌশল্যা কে 'গর্ভবতী' ভাবিয়া অনাগত সন্তানের মঙ্গল কামনা করিয়া বসিল !!!
বিলেতে বসিয়া দেবদাস দেশের কোন খবর লইতনা বলিলেই চলে। তাইতো যাত্রাকালে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হইতে দেশ ত্যাগ করিলেও দেশে ফিরিয়া দেখিলো একি আদলে নতুন আরেকটা বিমানবন্দর তৈরি হইয়াছে , নাম 'শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর' । দেশের এমন উন্নতি দেখিয়া দেবদাস খুশি না হইয়া পারিল না !
তবে ঢাকা হইতে মহাসড়ক ধরিয়া বাড়ি পৌছাইতে পৌছাইতে দেবদাস যোগাযোগমন্ত্রীর চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করিল। সড়কের চরম দুরাবস্থা দেবদাসের বিলাতি কোমরকে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঢাকার লোকাল বাসের বডির ন্যায় লক্কর-ঝক্কর করিয়া দিল।
দেশে ফিরিয়া দেবদাসের ভালই সময় কাটিতে লাগিল । বেশ কতক নতুন টিভি চ্যানেল আসিয়াছে । মাই টিভি , মোহনা টিভি দেখিতে দেখিতে দেবদাসের ছোটবেলার বিটিভির কথা মনে পড়িতে লাগিল । এ যুগের বিটিভিও হয়ত এই চ্যানেলগুলা দেখিয়া লজ্জা পায় !!
দুএক দিনের মধ্যেই 'প্রতিবেশী' পারুর সাথে দেবদাসের দেখা হইল । পারু তাহার ছোট্টবেলার 'ফ্রেন্ড' ! তের বছরের পারু আঠারোতে পা দিয়াছে । পাচ বছরে তাহার রুপ-লাবন্য-যৌবন হু হু করিয়া বাড়িয়াছে । ছোটবেলার ফ্রেন্ডকে এইবেলায় 'গার্লফ্রেন্ড' হিসাবে পাইতে দেবদাসের মন আনচান করিয়া উঠিল । এছাড়াও দেবদাসের ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দীর্ঘদিন যাবৎ single হিসেবে পড়িয়া রহিয়াছে । যৌবনকালে এই স্ট্যাটাস দেখিতে বরই কদাকার ।
তবে পারু দেবদাসকে দেখিয়া তেমন একটা পাত্তা দিলনা । উল্টো তাকে দেখাইয়া দেখাইয়া সে ফোনে আলাপ করিতো । টানা দু তিন দিন সেই দৃশ্য দেখিয়া একদিন দেবদাস পারুর হাতে ধরিয়া শাকিব খানের ন্যায় চিৎকার করিয়া বলিল 'কেন পারু, কেন? কি অপরাধ করেছি আমি? বল পারু বল? কেন তুমি আমার সাথে এমন করছ পারু, কেন? আমি তোমাকে এখনো ভালবাসি পারু ...''
পারু ঝটকা মেরে হাত সরাইয়া নিয়া বলল 'সময়, নদীর স্রোত এবং নারীর মন কারো জন্য অপেক্ষা করেনা দেবদাস । শুন্যস্থান পুরন করে নিতেই হয়''
পারুর মনের খবর বাহির করিতে দেবদাস উঠিয়া পড়িয়া লাগিল ।
বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সুত্রে দেবদাস খবর পাইল, তাহার অনুপস্থিতিতে পারু 'কোটা' ভিত্তিক পদ্ধতিতে চার চারটি প্রেম করিতেছে । কলেজে একজন , কোচিঙে একজন , গ্রামে একজন আর এলাকায় একজনের সাথে । পারু তাই চার সিমযুক্ত চাইনিজ ফোনসেট ব্যবহার করে ! কিন্তু দেবদাস হার মানিবার পাত্র নয়! সে পারুর হাত হইতে চার সিমওয়ালা ফোনসেট কাড়িয়া নিয়া, এক সিমের দামী ব্ল্যাকবেরি ফোন তুলিয়া দিল । ফোন বদলের সাথে সাথে পারুর মন ও বদলিয়া গেল। সে দেবদাসকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিল 'আমি তোমাকে এখনো ভালবাসি দেবু, বিলেত গিয়ে তুমি আমাকে ভুলে গেছ দেখে আমি অন্য ছেলেদের সাথে শুধু গণসংযোগে ব্যাস্ত ছিলাম... এই যা...'
দুটি হৃদয় এক হইল । অতঃপর দুইজনে মিলিয়া ঘরের কোনে , ক্ষেতের আইলে , কাশফুলের বাগানে , পুকুরের ঘাটে , নৌকার উপরে , গোয়াল ঘরে , গাছের ডালে বসিয়া ডেটিং করিয়া যাইতে লাগিল । তবে এমন কিছুই করিল না , যা আধুনিক ছেলে-মেয়েরা প্রেমের নামে করিয়া থাকে !!!
এরি ফাঁকে দেবদাস তাহার ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বদলাইয়া "single" to "in a relationship"করিল ।
পারুর সাথে সারাদিন ঘুরাঘুরি করিয়াও দেবদাসের সাধ মিটিত না । তাই রাতেও যাতে তাহারা একে অপরের সাথে লাইভ ভিডিও চ্যাট করিতে পারে সে জন্য দেবদাস পারুকে একখানা 'দোয়েল' ল্যাপটপ কিনিয়া দিল ।
২.
দেবদাস ও পারুর প্রেমের গ্রাফের এমন ঊর্ধ্বগতি দেখিয়া পারুর মা মহা উতসাহে দেবদাসের মায়ের কাছে তাদের বিবাহের প্রস্তাব লইয়া গেলেন । দেবদাস মনে মনে আশা করিল খুব দ্রুতই তাহার স্ট্যাটাস "in a relationship" থেকে ''engaged'' এ দাঁড়াইবে , অতঃপর ''engaged'' to ''married''....
কিন্তু বিবাহের আলাপ তিস্তা চুক্তির ন্যায় বিফলে গেল । উল্টো দেবদাসের মা 'কৌশল্যা' দুই পরিবারের আভিজাত্যের তফাত দেখাইয়া পারুর মা কে অপমান করিয়া তারাইয়া দিলেন। সব অপমান সহ্য করিয়া পারুর মা সুচিত্রা 'দ্রুত বিবাহ ট্রাইব্যুনাল' গঠন করিয়া পারুর বিবাহের দিন তারিখ ঠিক করিলেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে পারুর বিবাহ হইল । স্বামীর নাম ভুবন চৌধুরী । অভিজাত পরিবারের সন্তান হইলেও ভুবন চৌধুরী ছিলেন বিপত্নীক ও তিন সন্তানের পিতা।
দেবদাস ও পারুর আর ভিডিও চ্যাট করা হইল না । পারুও আলমারির কোনে 'দোয়েল' ল্যাপটপ খানা যত্নে তুলিয়া রাখিল। আর দেবদাস তাহার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করিতে বাধ্য হইল । 'in a relationship' to 'its complicated'.
পারুর সাথে বিবাহ না হয়ায় দেবদাস মানসিক ভাবে ভাঙ্গিয়া পড়িল । সে দৈনিক 'প্রথম আলু' পত্রিকার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ছুটির দিনেতে 'আপনার সমস্যা' বিভাগে চিঠি লিখিল 'আমি আমার গ্রামের এক মেয়েকে খুব ভালবাসিতাম , তাহার সাথে আমার বিবাহ হওয়ার কথা থাকিলেও হয়নি , ইহাতে আমি মানসিক ভাবে ভাঙ্গিয়া পড়েছি । বর্তমানে খুব হীনমন্যতায় ভুগিতেছি ! এখন আমি কি করিবো ?
ম্যাগাজিনের আপা উত্তর দিলেন 'তোমাকে ভেঙ্গে পরলে চলবে না , দ্রুত ঢাকা গিয়ে ভাল কোন মানসিক বিশেষজ্ঞ দেখাও।'
দেবদাস তাই করিল । বন্ধু চুনিলালকে লইয়া সে ঢাকা গেল । যাইবার কথা ছিল 'মানসিক বিশেষজ্ঞের নিকট, কিন্তু চুনিলালা বলিল 'ইহাতে মনে হয়না কোন উপকার হইবে, খামাকা কতক টাকা নস্ট হইবে , এরচাইতে গুলশান ক্লাবে গিয়া সামান্য মউজ-মাস্তি করিলে মানসিক অবস্থার এমনিতেই উন্নতি হইবে।'' দেবদাস সায় দিল । গুলশান ক্লাবে গিয়া তরল মদ গিলিতে গিলিতে তাহাদের সাথে পরিচয় হইল 'চন্দ্রমুখি' নামক এক মডার্ন 'বাইজী্র' সাথে । চন্দ্রমুখী আবার ছিল ইয়াবার ডিলার । তাই 'ইয়াবার' নতুন কাস্টমার ধরিতে সে দেবদাসের সাথে ভাব জমাইয়া ফেলিল । পুরাতন প্রেমের জ্বালা ভুলিতে দেবদাস এক হাতে মদ আর অন্য হাতে ইয়াবা তুলিয়া নিল । আর হৃদয়ে স্থান দিল সুন্দরী চন্দ্রমুখীকে । অতঃপর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস আরেকদফা চ্যাঞ্জ হইল।
এদিকে পারু শ্বশুরবাড়ির সকলকে, এমনকি মৃতা সতীনের ছেলেমেয়েদেরও আপন করিয়া লইলো। সুগৃহিণীর মতো বাড়ির সব দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলিয়া নেওয়ায় ল্যাপটপ খানা ছাড়িয়া অনলাইনে আসিবার সময়ও সে পাইতনা । তাই ল্যাপটপ 'দোয়েল' খাঁচার মধ্যে বন্দী হইয়াই পড়িয়া থাকিল । তবে দেবদাসকে সে ভুলিল না । পারুর মনের হার্ডডিস্ক হইতে দেবদাসের নাম ডিলিট হইলেও 'রিসাইকেল বিনে' ছিল তাহার সরব উপস্থিতি।
৩.
চন্দ্রমুখীর সাথে অবাধ মেলামেশা ও মদ্যপান দেবদাসকে গ্রাস করিয়া ফেলিল । মদ্যপান করিতে করিতে অবস্থা এমন দাঁড়াইল যে প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাহার পাজামার গিট খুলিয়া যাইত! এসকল ঘটনা পারুর কানে আসিতে সময় লাগিল না।
দেবদাসের মদ্যপান পারুকে দারুন ভাবে আলোড়িত করিল । সে ফেসবুকে ঢুকিয়া দেবদাসের সম্পর্কে খোঁজ খবর লইবার চেষ্টা শুরু করিল । দেবদাসের ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে 'in a open relationtip with chondromukhi' দেখিয়া পারু চমকিয়া উঠে ! পারু এক খানা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া মনে মনে বলিল 'মানুষ মরে গেলে পচে যায়, আর বেচে থাকলে ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে' !!
চন্দ্রমুখি সম্পর্কে জানিতে পারুর ইচ্ছা হয়। সে তাহাকে ফ্রেন্ড রিকুএস্ট পাঠায়, চন্দ্রমুখী তা একসেপ্টও করে। পুঁজোর event create করিয়া পারু চন্দ্রমুখিকে পুজোর নিমন্ত্রন করে । চন্দ্রমুখি তাহাতে রাজী হইয়া পারুদের পুজোও দেখিতে আসে।
পুঁজোর অনুষ্ঠানে চন্দ্রমুখীকে দেখিয়া পারুর স্বামী ভুবন চৌধুরী চমকে উঠিলেন। ইউটিউবে তিনি চন্দ্রমুখীর প্রচুর নাচের ভিডিও আগে প্রত্যক্ষ করিয়াছেন । বেশ কিছু ডাউনলোডও করিয়াছিলেন । সে কথা তিনি সকলের সামনে ফাঁস করিয়া দেব । চন্দ্রমুখীও অপমানিত হইয়া জনসম্মুখে পারু ও দেবদাসের পুরাতন প্রেমের রোমাঞ্চকর কাহিনি বলিয়া দেয়। সব শুনিয়া পারুর স্বামী ভুবন চৌধুরী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পারুকে গৃহবন্দি করিয়া গৃহে সামরিক শাসন জারি করিলেন ।
এমন ঘটনায় দেবদাস আর চন্দ্রমুখীর সম্পর্কে চিড় ধরিল। আর দেবদাস তাহার ফেসবুক ফ্রেন্ডদেরকে জানাইয়া দিল যে 'debdas went from being ''in a open relationtip with chondromukhi'' to ''single''
এদিকে মদ খাইতে খাইতে দেবদাসের অবস্থা 'যায়যায়দিন' । ডাক্তার তাকে দেখিয়া বলিলেন 'টাইম শর্ট, বড়জোর এক সপ্তাহ।'
মরিবার আগে দেবদাসের পুরাতন প্রেম আরকবার জাগিয়া উঠিল । শেষবেলায় সে শুধু একবার পারুকে দেখিয়া যাইতে চায় । তাই তাহার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস আরেক দফা বদলাইয়া দাঁড়াইল "single" to "it's complicated."...
৪.
মৃত্যুর দোয়ারে পতিত হইয়া একদিন দেবদাস পারুর বাসার সামনে আসিয়া হাজির হইল। উদ্দেশ্য পারুকে একটিবারের জন্য দেখিয়া শেষ নিঃশ্বাস ফেলা । কিন্তু সে জানিতে পারিল, পারু গৃহবন্দী । এক্স-বয়ফ্রেন্ড হিসেবে দেবদাসও এক্স-গার্লফ্রেন্ডের বাড়ির ভিতরে ট্রানজিট সুবিধা পাইবে না । কিন্তু পারুকে তাহার একনজর দেখিতেই হইবে । এমন রাজনৈতিক সমীকরণে শেষ ভরসা ভিডিও চ্যাট !! দেবদাস ফেসবুকে ঢুকিয়া পারুকে ওয়াল পোস্ট করিল 'ami ar beshikkhon tikbo na... skype a asho... tomake shesh barer moto dekhi...' পারু ফেসবুকে অনলাইনেই ছিল। সে তৎক্ষণাৎ কমেন্ট করিল 'omg ! ok :'('
দেবদাস skype এ ঢুকিয়া পারুর অপেক্ষা করিতে লাগিল । পারুও প্রথমবারের মত 'দোয়েল' ল্যাপটপে ভিডিও চ্যাট করিবার জন্য প্রস্তুতি নিল । কিন্তু বাধিল বিপত্তি , 'দোয়েল পাখির' জানে এতো লোড সহ্য হইলনা । বুম করিয়া একখানা আওয়াজ দিয়া 'দোয়েল' পাখি উরিয়া গেল । একি সাথে দেবদাসের দেখা পাইবার সকল সম্ভবনার অবসান ঘটিল।
স্কাইপ এ বসিয়া অপেক্ষা করিতে করিতে পারুর গৃহের সামনেই দেবদাসের মৃত্যু ঘটিল । আর শেষবারের মত দেবদাস ফেসবুকে লিখিয়া গেল 'ক্ষ্যাতা পুরি তোর relationship status' এর'..।
Md Raihanuddin
আরে আরে , একি !!
অফিস থেকে ফিরেই আমি এইগুলা কি দেখি ,
হাত-পা তুলে মুখ ফিরিয়ে একা বসে আছো,
খেতে কিছু দেবে , নাকি রান্না হয়নি আজো ?? :-*:-*
কি বললে মিথ্যুক আমি !! :-*:-*রাখিনা কোন কথা
কোন কথাটা মিস হয়েছে দেখাও দেখি যথা ।
তোমায় নিয়ে যাইনা কোথাও এইকি অভিযোগ,X(X(
আরে ; বেশী ঘুরলে হয়ে যাবে ঘুরাঘুরির রোগ ।
আর তাছাড়া, এইতো সেদিন , গত রবিবারে ,
শশুর বাড়ি ঘুরে এলাম তোমায় নিয়ে ঘাড়ে ।
তুমি বল রমনা যেতে তোমায় নিয়ে সাথে ,
সেইখানেতে ঝোপ জঙ্গল ,কেঊ কি যায় সাধে ।
কি বললে কিপটা আমি , দেইনা কিছু কিনে,
কেন কেন ! গত বছর ,দিলাম তোমায় দুটো শাড়ি এনে ,
দুই শাড়িতে দুইটি বছর এমনি চলে যাবে ,
সামনের বছর আসুক তখন আরো দুটো পাবে ।
আবার কি চাও ? :-*গয়না গাটি ! সেটা আবার কেন ?
এমিটেশন কতগুলো কিনে দিলাম যেন ?
সোনার গয়না ??:-/:-/ এত বোকা নই , তা জেন রেখে ,
দামি জিনিস কিনে দিয়ে ডাকাত আনবো ডেকে !!
আরে আরে ! চললে কোথায় ব্যাগ গুছিয়ে সাথে ,
বাপের বাড়ি ! তা ঠিক আছে , ভাড়া আছে হাতে ??
আমি দেব ?X((X(( মোটেও না , এখন মাসের শেষ ,
বাপের বাড়ি ঘুরতে যাবে ঘুরে এসো বেশ ।
লক্ষী সোনা , B-) যাওয়ার আগে একটু যাও তো শুনে ,
ওখান থেকে হাজার পাঁচেক টাকা এনো গুনে । 8-|
তোমার বাবা বাড়িওয়ালা , পারবে ঠিকই দিতে , B:-/ :-0 :-0 :-0
মনে করে এনো কিন্তু খেয়াল রেখো পথে ।
শু জুতা পরে
গেলাম ইন্টরভিউতে,
প্রশ্ন না করে
বলে ‘মামা’ দিতে।
চাকরি খুঁজে খুঁজে
জুতার তলা গেছে ছিঁড়ে,
চাকরি তো পাই নাই
মাঝ দিয়া চিনছি পুরা শহরটাই।
আজও আমি অলিতে
খুঁজে যাই চাকরি,
কোথাও দেখলে লিফলেট
সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ি।
যোগাযোগ করে
যখন সেখানে যাই,
বলে হাত নেড়ে
‘মামা’ আগে চাই।
প্রতিদিন সকালে
আব্বা ডায়ালগ মারে,
চাকরি না খুঁজে
বেলা করে ঘুমায় এ কেমন পোলারে!
আব্বার কথা শুনে
থাকতে পারি না ঘুমায়ে,
কান্না আসে ছেপে
আর কত টানবে আমারে।
জিএফ দিছে কল
বলছে দেখা করতে,
বাইড়া গেল বুকের কাঁপন
জানি বলবে তাড়াতাড়ি বিয়া করতে।
কেমনে তারে বুঝাই
চাকরি না পেয়ে
কেমনে প্রস্তাব পাঠাই?
বেকার ছেলের কাছে
মেয়ে দিবে কোন ভরষায়!
চাকরি নাই বলে
জিএফ গেল ছেড়ে,
বলতে পারব নাতো কোন কালে
“চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ,
সম্বন্ধটা এবার তুমি ভেস্তে দিতে পারো।
বেকার আমি চলেছি নিরুদ্দেশ,
চেহারায় ভাসে হতাশার ক্লান্তি লেশ।
মামা,টাকার জোরে তারা চাকরি পেয়ে যায়,
এসব আমার নেই বলে মেধার মুল্য নাই।
উৎসর্গ : সকল বেকার যুবকদের
(বিঃদঃ ইহা একটি ১৪ ফেব্রুয়ারির চেতনায় উদ্ভূত প্যারডি কবিতা :p ;) )
১৪ ফেব্রুয়ারির কত দেরি সুন্দরী?
এখনো তোমার হৃদয় ভরা মেঘে?
প্রেম ভালবাসা এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি স্বপনে, তুমি জাগরনে....
সারাটা দিবস তোমায় ভেবে যে মরি!
১৪ ফেব্রুয়ারির কত দেরি সুন্দরী?
জীবনের কত বসন্ত শেষে...
কোন প্রান্তরের কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে।
এ কী বেদনা....জীন্দেগানীর বা'ব
তোলে মর্সিয়া ব্যাথিত দিলের তুফান শ্রান্ত খা'ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে উড়ে যায় জীবনের লাল ঘুড়ি।
তুমি স্বপনে, তুমি জাগরনে
সারাটা দিবস তোমায় ভেবে যে মরি।
১৪ ফেব্রুয়ারির কত দেরি সুন্দরী?
রমনায় গিয়ে বালকেরা দিন গোনে
বুঝি দখিনা হাওয়ায় তোমার জুতার ধ্বনি শোনে
বুঝি কুয়াশায়,জোছনা মায়ায় ওড়না খানি দেখে...
আহা,পেরেশান বালকের দল
বটমূল কিনারে জাগে তকদিরে
নিরাশার ছবি এঁকে।
ঘাসে সবুজের রমনাতে ঘুরে
চলছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
তুমি স্বপনে,তুমি জাগরনে
একাকী রাতে তোমায় ভেবে যে মরি...
১৪ ফেব্রুয়ারির কত দেরি সুন্দরী?
শুধু ছলনায়,শুধু প্রেমের ঘোরেতে ফেলে
পথ সীমাহীন ভ্রান্তি নিয়েছ তুলে।
তোমাদের ছলায়-কলায়, পথের কিনারে বালকের দল বসি
দেখছে সভয়ে, ধোকা দিয়েছে, তাদের প্রেয়সী!
তোমাদের খেলার ধূলায় লুটায়ে পড়ি...
কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।
প্রেমিকের দল মাঝে তোমারা উঠিয়েছ আহাজারি
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দন ধ্বনি, আওয়াজ শুনছি তারি...!
ও কি বাতাসের হাহাকার - ও কি রোনাজারি প্রেমিকের
ও কি বাস ট্রাকের গর্জন ও কি বেদনা দেবদাসের।।
ও কি প্রেমাতুর পঁাজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরি।।
সুন্দরী!!
জাগো রমনার কৈফিয়তের তীব্র ভ্রূকুটি হেরি,
জাগো অগনন প্রেমাতুর মুখের নীরব ভ্রূকুটি হেরি।
চেয়ে দেখ ১৪ ফেব্রুয়ারির কত দেরি,কত দেরি!
((বিঃদ্রঃ সকল বালিকা নিজেদের সুন্দরী ভাবিয়া কবিতার বিরোধীতা করলেই আমি কাইন্দা বাচি... :p ))
মুল কবিতা . . . . স্বাধীনতার সুখ . . . রজনি কান্ত সেন
====================================
গায়ের দরিদ্র ছেলেটা কে ডেকে বলিছে সোনাই
ভাঙ্গা ঘরে থাকো তুমি, সুখ আনন্দ ছাড়াই,
আমি থাকি টিভি ল্যাপটপ নিয়ে পাঁচ তলার পরে
বিদ্যুৎ বিহীন থাকো তুমি, তোমার ভাঙ্গা ঘরে ।
ছেলেটা বললো হেসে, আমার বাড়িতে নিঃশ্বাস নেই প্রানটি ভরে
চালের ফুটোয় জোছনার আলো পরে ঝরে ঝরে।
টিভি দেখ বন্দি ঘরে, প্রানটি ভরে খেল ল্যাপটপের সাথে
আমার গায়ের সবুজ বরন মায়ের আঁচল ধরে খেলি আর হাটি পথে পথে ।
সবুজ মাঠে ক্রিকেট খেলি তুমি ঘরে বন্দি
কৃত্রিম জগত নিয়ে বাহাদুরী এই দুঃখে কান্দি।
তুমি চালাও ব্যাটারীর গাড়ি সময় কাটে, আটকা থাকো ঘরে
তৃষ্ণা যে মিটাই আমি সবুজ বরন পথটি ধরে বাংলা মাকে দেখি নয়ন ভরে।
আমাদের ছোট গায়ে বড় বড় ঘর
থাকি সেথা হয়ে সবে একে অন্যের পর
পাড়ার সকল ছেলে রাজনীতির ছলে
হাতে পিস্তল লই ক্ষমতার বলে।
আমাদের ছোট গ্রাম শহর সমান
ধুলোবালু বাতাসে ওষ্টাগত প্রাণ
মাটগুলো নেই আর দালান পর দিঘির
চাঁদের কিরন আজ হয়েছে তিমির।
আমাদের ছোট নদী শেষ হয়েছে কবে
বইয়ের পাতায় শুধু সেই স্মৃতি রবে
খাল-বিল,নদ-নদী এখন আর নাই
গরু মহিষ দেখিতে চিড়িয়ায় যাই।
চোর ডাকাত মাস্তান পুলিশ যেন
এমপি মন্ত্রী সব আত্বীয় হেন
সকালে পত্রিকাওয়ালার হাকডাক ছুটে
নব নব আশংকায় ঘুমটা টুটে।
(কবি বন্দে আলী মিয়ার "আমাদের গ্রাম" কবিতার প্যারডি। কবি বেচে থাকলে আজ হয়তো এভাবেই লিখতেন।)
বরের বাপ সবুর করিতে পারিতেন কিন্তু কন্যার বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না । তিনি দেখিলেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়া তাহার একমাত্র মেয়েটি সবেমাত্র বিবাহযোগ্য হইলেও তাকে আর বেশিদিন গৃহে আটকে রাখার ক্ষমতা তাঁহার আর নাই। অনতিবিলম্বে বিবাহের ব্যবস্থা না করিলে যে কোন সময় যে কোন অঘটন ঘটিয়া যাইতে পারে !!
আমি ছিলাম বর । বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করাটা কেউ প্রয়োজন বলে মনে করিলো না । ডিগ্রী পরীক্ষায় টানা তিন বারের প্রচেষ্টায় আমি পাশ করিতে পারিনি । সুতরাং এমন গৃহপালিত গর্দভকে অতি শীঘ্রই বিবাহ দেওয়ার আয়োজন করা হইলো । অবশ্যি , মনে মনে বিবাহের জন্য অনেক আগে থেকেই আমার আগ্রহ ছিলো । ইতিমধ্যে borbodhu.com সহ বেশ কয়েকটি বিবাহ বিষয়ক ওয়েবসাইটে আমি আমার জীবনবৃত্তান্ত পেশ করিয়াছি । যদিও আমার মতো গর্দভকে বিবাহ করিতে কেহ আগ্রহ প্রকাশ করে নাই। ফলে পারিবারিক ভাবে নির্ধারিত বিবাহের প্রস্তাবে আমাকে সম্মত হইতেই হইল ।
আমার সাথে যাহার বিবাহ হইয়াছিলো আমি তাহার সত্য নামটি দিবনা । কারন উহার নাম প্রকাশ করিলে আপনারা ফেসবুকে সার্চ মারিয়া খুজিয়া লইতে পারেন ।
তবে, আমার এ লেখায় তাহার যেমন হোক একটা নাম চাই। তাহার নাম আমি দিলাম ‘ গুগলি ’ । কারন গুগলের মতো জগতের তাবৎ বিষয়ে ছিল তাঁর অসীম জ্ঞান । ছেলেদেরকে কেমন করে ‘লেবেঞ্ছুশ ’ বানানো যায় সে বিষয়ে ছিল তাঁর বিস্তর প্রতিভা।
তবু এইরকম একটা ‘প্রেমসম্রাজ্ঞী’ মেয়ের সঙ্গে বাবা যে আমার বিবাহ দিলেন তাহার কারন , মেয়ের চরিত্রের আকার ছোট বলিয়াই যৌতুকের পরিমান বড় ছিল । গুগলি আমার শশুরের একমাত্র মেয়ে । বাবার বিশ্বাস ছিল , কন্যার পিতার সমস্ত সম্পত্তি টাকা আমার ভবিষ্যতের কপাল খুলিয়া দিতেছে ।
আমার শশুর এই বিবাহ লইয়া অত্যান্ত আগ্রহি ছিলেন । তিনি ছিলেন শেয়ারমার্কেটের একজন উচু লেভেলের প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগকারী । ১৯৯৬ সালে তিনি একবার হার্ট এটাক করেন । স্বামীর হার্ট এটাক দেখিয়া স্ত্রীও হার্ট এটাক করেন । তবে তিনি টিকলেও তাঁর স্ত্রী টিকেন নাই। গুগলির মা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তৎক্ষণাৎ মারা যান । মা মরা এই মেয়েটি প্রতি বৎসর অন্তর অন্তর একটু একটু করিয়া কু-চরিত্রের অধিকারী হইতে লাগিলো তাহা আমার শশুরের চোখেই পড়ে নাই ।
গুগলির বয়স যথাক্রমে ১৯ হইলো । কিন্তু ততদিনে তাহার প্রায় অর্ধশতাধিক প্রেমের অভিজ্ঞতা অর্জন হইয়া গিয়াছিলো । মোবাইল ফোনে আলাপ করিতে করিতে তাহার কর্ণছত্র বিবর্ণ হইবার উপক্রম হইয়া গিয়াছিল ।
তবে আমার বয়স আমি বলিবোনা ! আধবুড়া বয়সে আমার বিবাহ হইলো । ইতিমধ্যে আমার এক জুলফিতে হাল্কা পাক ধরিয়াছে । ইহার জন্য প্রতি সপ্তাহে কলপের অর্থ সংস্থান করিতে আমার বেশ বেগ পাহিতে হইতেছে ।
যা হউক, এক কুক্ষনে আসিয়া আমার বিবাহের দিন ঠেকিলো। যে দিনের জন্য আমার পরবর্তী জীবন ইভা রহমানের গানের মতো ‘বেসুরা’ ও সাহারা খাতুনের মুখের মতো ‘অন্ধকার’ হইয়া পড়িল ! তবে বিবাহ নামক এই অনুষ্ঠানের দিন আমি ইহার কিঞ্চিৎও টের পাই নাই । টের পাইলে আমি কভু এই ভুল করিতাম না। বিবাহের আসরেই বিষ খাইতাম !
বিবাহ সভার চারিদিকে হট্টগোল; তাহারই মাঝখানে কন্যার কোমল হাতখানি আমার হাতের উপর পড়িল । আমার মন বারবার করিয়া বলিতে লাগিল , ‘পাইছি রে মামা , পাইছি , আর ছারুম না । ’ তখন পর্যন্ত আমি বিবাহের ব্যাপারে অত্যান্ত আনন্দিত ছিলেম ...... হায় !
আমার শশুরের নাম গৌরীশঙ্কর । বিবাহ শেষে কর্মক্ষেত্রে ফিরিবার পূর্বে তিনি আমাকে ডাকিয়া বলিলেন ‘ বাবা তোমার হাতে আমার মেয়েকে তুলিয়া দিয়া আজিকে রাত্রে একটা খাসা শান্তির ঘুম দিবো । যে ধন আমি তোমাকে দিলাম , তাহার মুল্য বুঝিতে বুঝিতেই তোমার জীবনের ইতি ঘটিয়া যাইতে পারে।’
যাইতে যাইতে তিনি কহিলেন ‘ আমার মেয়েটির মাঝে মাঝে ড্রিঙ্কস করিবার বড়ই শখ হয় ! এবং মাঝে মাঝে বান্ধবীদের খাওয়াইতেও ভালবাসে ।এ জন্য তোমাদের বিরক্ত করিতে চাহিনা । বলিয়া তিনি আমার হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা চেক তুলিয়া দিলেন । এরপর হাসিমুখে গৃহত্যাগ করিলেন ।
আমি স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম । মনে মনে বুঝিলাম ‘ইহারা অন্য জাতের মানুষ!’
বিবাহের দিনই বুঝিয়া গেলাম বড়োলোকের এই কন্যাকে বিবাহ করিয়া আমার কপাল খুলিয়া গিয়াছে । শশুরের টাকায় আমার বাকি জীবন কাটিয়া যাইবে চিন্তা করিতেই আমার তীব্র আনন্দ হইতে লাগিলো । সে যে আমার সাধনার ধন ছিল; সে আমার সম্পত্তি নয় , সে আমার সম্পদ রুপে আবির্ভূত হল ।
গুগলি... না, এ নামটা আমার আর ব্যাবহার করা চলিলনা । লোকে জানিলে জানুক, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাইলে পাঠাক; ইহাতে এখন আমার আর কী আসে যায় ? তাহার নাম ছিল ‘হৈমন্তী’ । আর ফেসবুকে তাহার নাম ছিল ‘PRINCES HOIMONTI’ ।তাহার ফেসবুকে ফ্রেন্ড ছিল ৪০০০ জনের আধিক । ফলে অনেকেই ইহাকে ফেইক আইডি মনে করিয়া ভুল ভাবিত।
আমার মনে একটা ভাবনা ছিল যে, লেখাপড়া জানা আধুনিক ঘরের মেয়ে, তাহার সাথে তাল মিলাইয়া চলিতে আমার কষ্ট হইবে । ঘটিলও তাই , এঞ্জেলিনা জোলির সামনে আমি শাকিব খান হিসাবে গণ্য হইলাম । নগণ্য হইলাম !!
এতো গেলো একদিকের কথা । আবার অন্য দিকও ছিল , সেটা বিস্তারিত বলার সময় আসিয়াছে।
আমার শ্বশুর শেয়ার বাজারে বিস্তর লস করিয়া দেউলিয়া হইবার উপক্রম ধরিলেন । ইহাতে তাহার টাকা পাঠাইবার ক্ষমতা শেষ হইয়া গেলো । ফলে হৈমন্তীরও ড্রিঙ্কস করিবার পথ বন্ধ হইয়া গেলো । এবং সাথে সাথে সংসারে অশান্তির আগুন ধরিয়া গেলো । ইহাতে সে ক্ষুব্দ হইয়া বলিলো ‘তোমাকে বিয়ে না করিয়া আমি যদি এক খানা কাঁঠাল গাছ কে বিয়ে করিতাম তাহলে ভাল হইতো, উহার কাঁঠাল বেচিয়া আমি ড্রিঙ্কস করিতে পারিতাম।’ এ সময় পাশে দাঁড়ান ছিলেন আমার বাবা। বাবার ছিল বহুমুত্র (ডায়বেটিক্স) ও উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) । ইহা শুনিতে পাহিয়া বাবার উচ্চ রক্তচাপ ‘নিম্নচাপে’ পরিনিত হইয়া তাহার অন্তরে প্রবল ঝড় তুলিল। বহুমুত্র মারাত্মক রুপে বাড়িয়া উঠিলো এবং আমরা ইন্সুলিন খোঁজারও সময় পাহিলাম না। ইহার পূর্বেই বাবা গত হইলেন ।
এদিকে টাকা না পাহিয়া হৈমন্তী পাগলের মতো আচরন করিতে লাগিল । সেলবাজারের মাধ্যমে সে আমাদের ঘরের আসবাবপত্র বিক্রয় করিয়া ড্রিঙ্কস করা শুরু করিলো ,ঘরের সবকিছু বেচিতে বেচিতে শুধু এক খানা পালঙ্ক ও টেলিভিশন বাদ রাখিলো । পালংকের অভাবে আমার মা মাটিতেই ঘুমাইতে লাগিলেন আর ফ্রিজের অভাবে তাহার সংসার জীবন দুঃসহ হইয়া উঠিল । তাহার পরেও মা কিছু বলিলেন না । কারন এত ঝামেলার পরও সন্ধ্যা পরে তিনি আরাম করে কলকাতার সিরিয়াল দেখিতে পারিতেন । তাই সব মুখ বুজিয়া সহ্য করিয়া গেলেন !
অবশেষে হৈমন্তী আর কিছু না পাইয়া টেলিভিশন খানাও বিক্রয় করিয়া ফেলিলো। ইহাতে আর আমার মা চুপ থাকিতে পারিলেন না। কারন আমার মার ‘স্টার জলসা’ ও ‘জি বাংলার’ সিরিয়াল দেখা বন্ধ হয়ে গেলো । তিনি তেলে-বেগুনে জলিয়া জীবন্ত ‘বেগুনিতে’ পরিনিত হইলেন !! ফলস্বরূপ আমার নিজ গৃহেই ‘কলকাতার সিরিয়াল’ শুরু হইয়া পড়িল । ইহা টিভিতে দেখিলে তবু সহ্য করা যায় , কিন্তু, বাস্তবে সহ্য করা যায়না । যাহার ফলে আমার বাঁচিবার সাধ মিটিয়া গেলো । এবং এক বিকালে আমি পৃথিবী হইতে লগ আউট করিবার সিদ্ধান্ত নিলাম ।
আমার মৃত্যুর এখনও বিশ দিনও পার হয় নাই । কিন্তু শুনিয়াছি হৈমন্তী ইতিমধ্যে পাত্রের সন্ধানে বাহির হইয়াছে । ফেসবুকের মাধ্যমে সে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কে সিলেক্ট করিয়া ফেলিয়াছে । থাক এসব বলে আমার আর লাভ কি । তবে আপনারা উহার ব্যাপারে সাবধান থাকিবেন । বিদায় ।
Md Raihanuddin
সময়কালঃ ২০২১ ।
স্থানঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ ।
০১. মাঝি কুবের ও তাহার পরিবার ।`
পদ্মাপাড়ের এক অজপাড়াগ্রাম কেতুপুর । সেই গ্রামের মাঝি সমিতির নির্বাচিত যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক কুবের। কুবের গরিবের মধ্যে গরীব আর ছোটলেকের মধ্যে ছোটলোক । ক্রেডিট কার্ড , ডেবিট কার্ড তো দুরের কথা একখানা ভিজিটিং কার্ডও তাহার নাই।
পুত্র লখা, কন্যা গোপী আর স্ত্রী মালাকে লইয়া কুবেরের পরিবার । হিন্দি সিরিয়াল ভক্ত মালা সর্বদা মনের মাধুরি মিশাইয়া কুবেরের সাথে ঝগড়া করিবার চেষ্টা করিতে থাকিল। তাই ঘরের অশান্তিতে কুবের পিক আওয়ার অফ পিক আওয়ার সর্বদা পদ্মার বুকে মাছ ধরিতে ব্যাস্ত থাকিত।
০২. পদ্মার ইলিশঃ
সারদিন জাল টানিয়া নদীতে দুই-তিন খানা ছোট মাছের বেশি কিছু পাওয়া যায়না । ইলিশ মাছ পাওয়া তো ভাগ্যের বিষয় ! সমস্ত পদ্মায় বছরে দুএকটা ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তাই বর্তমানে বড় সাইজের একখানা ইলিশ মাছ বেচিয়া ঢাকা শহরে অভিজাত ফ্ল্যাট কিনিয়া লওয়া সম্ভব । গতবৎসর একসাথে দুইখানা ইলিশ মাছ ধরিয়া গনেশ মাঝি সপরিবারে আমেরিকা চলিয়া গিয়াছে।
তিন চার বছর পূর্বে এক খানা ছোট সাইজের ইলিশ মাছ পাইয়া কুবের তাহা বিক্রয় করিবার জন্য সেলবাজারে দিয়াছিলো। সেই দিন তাহাকে প্রায় লক্ষাধিক কল রিসিভ করতে হইয়াছিল। উহা বিক্রয় করিয়া সেই টাকা কুবের ইউনিপেথ্রিইউতে বিনিয়োগ করিয়াছিলো । তাহার পোড়া কপাল , কোম্পানি সব লইয়া চম্পট দিয়াছে ।
ডিজিটাল বাংলাদেশে পদ্মার ইলিশ খাওয়ার সৌভাগ্য শুধুমাত্র রাস্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর মাঝে মাঝে হইয়া থাকে। নববর্ষের দিন মানুষ পদ্মার পানি জ্বাল দিয়া পান্তা ভাতের সাথে খাইয়া থাকে । ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের কেউ রাষ্ট্রীয় সফরে এলে উপহার হিসেবে তাদের প্লাস্টিকের দুইখানা ইলিশ মাছ দেওয়া হয়।
০৩। কপিলার আগমনঃ
একবিকালে দুইখানা পুটিমাছ ধরিয়া কুবের ক্লান্ত হইয়া নদীর ধারে বসিয়া ল্যাপটপে এক কুয়েতি এক বোরকাওয়ালীর সাথে ফেসবুকে চ্যাট করিতেছিলো । কুয়েতি তাহাকে ভিডিও চ্যাটের আমন্ত্রন জানাইলেও মাছ ধরিয়া তাহার চুল অগোছালো ছিল বিধায় সে তাতে রাজী হইলো না। এমন সময় স্ক্রিনে ‘কপিলার’ স্ট্যাটাস ভাসিয়া উঠিল । কপিলা মালার ছোটবোন , সম্পর্কে কেবেরের শ্যালিকা।
Kopila shundhori লিখিয়াছে ‘too much flood in my village , lol , omg , too much water … lol … don’t know swimming ..omg … lol …lol.lol , pray for us … :P .
কুবের কমেন্ট দিলো ‘ tumi koi ? @kopila ।
কপিলা উত্তরে লিখিল ‘ I am in my father house , lol @ dulavai.
কুবের আবার লিখিল ‘I m coming … wait for me @ kopila.’ কপিলা সেই কমেন্টে লাইক মারিল।
কপিলাকে উদ্ধার করিতে কুবের দ্রুত শ্বশুরবাড়ি ছুটিয়া গেলো । যেন কপিলা ডুবন্ত লঞ্চ আর কুবের ‘উদ্ধারকারী জাহাজ হামযা’।
স্বামী ফেরত কপিলাকে তাহার বোনের বাড়ি পাঠাইতে কপিলার বাবা মায়ের মোটেও আপত্তি ছিলোনা । কারন এমন যুবতী নারীকে খোলা স্থানে রাখা মোটেও নিরাপদ নহে । শত শত পরিমল লোভী দৃষ্টিতে চারিদিকে ঘুরাঘুরি করিতেছে।
কপিলার নতুন স্থান হইলো কুবেরের সংসারে । কপিলা আসিয়াই সংসারের সকল দায়িত্ব গ্রহন করিল । মালার কাজ হইলো শুধু রাষ্ট্রপতির ন্যায় শুধু খাওয়া দাওয়া আর ঘুম।
০৪. কুবের ও কপিলার রোমান্সঃ
মালার সাথে বিবাহ হওয়ার পর হইতেই কপিলার প্রতি কুবেরর দুর্নিবার আকর্ষণ। কপিলা ফেসবুকে কোন ছবি পোস্ট করিলে কুবের কোপাইয়া কমেন্ট করিত ‘how cute’…’so sweet’….’khub shundor’…..’tomake angeler moto lagche’ ।
অবশ্য কুবেরের বিবাহের সময় কপিলা নিতান্তই কিশোরী ছিল। তখনকার প্রস্ফুটিত পুস্প আজ সুবাসিত ফুলে পরিনিত হইয়াছে । সেই ফুলের কড়া সুবাস প্রতিনিয়ত কুবেরের নাকে আসিয়া লাগিতেছে ।
নারী জাতি ছলনাময়ি আর কপিলাতো ছলনাময়ীদের জীবন্ত কিংবদন্তী। কুবের মাঝির মনে ঢেউ তুলিতে সে সদাব্যস্ত রহিল । গৃহে মালার সামনে কপিলা নিতান্ত ভদ্রতা বজায় রাখিলেও তামাক দেওয়ার নাম করিয়া কুবেরের পিছু পিছু আসিয়া কপিলা বিভিন্ন প্রকার রঙ তামাশা করিবার চেষ্টা করিত । পাছে লোকে দেখিয়া ফেলে ভাবিয়া কুবের ধমক মারিয়া বলিত ‘বজ্জাতি করছোস যদি, নদীতে চুবান দিমু কপিলা, তুই কি আমারে ‘ইমরান হাশমি’ পাইছস ? কপিলা ‘আরে পুরুষ’ বলিয়া মুখ ঝামটা দিয়া চলিয়া আসিত।
রাতে মাছ ধরিতে ধরিতে কুবের কপিলার সাথে সারা রাত চ্যাট করিতো । চ্যাট করিতে করিতে কপিলা প্রায়ই কুবেরের প্রতি অশ্লীল ইঙ্গিত করিয়া বসিতো, আর উত্তরে কুবের একখানা হসির ইমো দিতো । কপিলা তৎক্ষণাৎ লিখিত ‘’ হাসলা যে মাঝি?’ কুবের কোন উত্তর দিতো না ।
কুবেরের মোবাইলের ওয়ালপেপারে মালার ছবি বদলিয়া দ্রুত কপিলার ছবি স্থান করিয়া নিলো।
০৫. গোপীর অসুস্থতা ও হোটেলে রাত্রি যাপনঃ
ভেজাল খাবারের প্রভাবে কুবের-কন্যা গোপীর হঠাৎ একদিন গ্যাস্ট্রিকের তীব্র প্রদাহ শুরু হইলো । প্রদাহ তীব্র হইতে থাকিলে কুবের গোপীকে ঢাকা লইয়া যাইবার ব্যবস্থা করিল । মালার অক্ষমতার কারণে কুবেরের সঙ্গী হইলো কপিলা । আরেকজন তাহাদের সঙ্গী হইলো, তাহার নাম ‘রাশু’ ।
সম্পর্কে সে গোপীর বয়ফ্রেন্ড । গার্লফ্রন্ডের এমন বিপদে সে কি পাশে থাকিবে না ? গোপী রাশুর সম্পর্ক কুবের টের পাইলেও কিছু বলিতো না । যত যাই হোক পাত্র হিসাবে রাশু হাজারে এক ।
ঢাকার ডাক্তার গোপীকে দেখিয়া উদাস হইয়া বলিলেন ‘রোগীর অবস্থা তো আশংকাজনক’। এখনি তাকে I.C.U তে ভর্তি করিতে হইবে । ইহা শুনিয়া রাশু ‘ইয়ে কেসি কাসুটি জিন্দেগি কি’ বলিয়া মাটিতে লুটিয়া পড়িল ।
ডাক্তারের পরামর্শে তাহার নিজস্ব ক্লিনিকের i.c.u তে গোপীকে ভর্তি করিয়া কুবের,কপিলা ও রাশু ওয়ান স্টার মার্কা এক হোটেলের দুই রুম ভাড়া করিল । কুবের-কপিলা এক রুমে ও রাশু অন্য রুমে থাকিবার ব্যাবস্থা হইলো । ঘুমানোর পূর্বে রাশু আসিয়া তাহার ল্যাপটপ খানা রাখিবার নাম করিয়া কুবের-কপিলার রুমে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রাখিয়া গেলো ।
সেইরাত্রে কপিলার মায়াবি আমন্ত্রনে কুবের মুহূর্তেই ইমরান হাশমীর রুপ ধারন করিল । আংরা হয়ে জ্বলিতে থাকা আগুন খোলা বারুদের সংস্পর্শে আসিয়া তীব্র ভাবে জ্বলিয়া উঠিল । বাকি সব ঘটনা নীরবে ঘটিয়া গেলো ... কেহ কিছু টের পাইলোনা।
পরদিন বিকালে গোপীকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ সুস্থ ঘোষণা করিল । দুইখানা এন্টাসিড ট্যাবলেট খাওয়াইয়া ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাখখানেক টাকার বিল আবদার করিলো । বিল দেখিয়া কুবের পাঁচ মিনিটের ভেতর সাতবার অজ্ঞ্যান হইয়া গেলো । অগ্যতা কপিলা তাহার স্বর্ণালঙ্কার জমা রাখিয়া কুবেরকে সেই যাত্রায় রক্ষা করিল।
রোগী সুস্থ হওয়া সত্বেও গোটা পরিবার সেইবার কাঁদিতে কাঁদিতে ক্লিনিক হইতে প্রস্থান করিয়া গ্রামে ফিরিয়া আসিল ।
দু এক সপ্তাহের ভেতরেই কপিলার স্বামী আসিয়া কপিলার মান ভাঙ্গাইয়া লইয়া গেলো । শুরু হইলো কুবেরের বিরহের দিন।
০৬. হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপ আবাসন প্রকল্পঃ
একদিন কেতুপুরে আসিয়া হাজির হইলো কোট-টাই পরা এক ব্যাক্তি । নাম তাহার হোসেন মিয়া। ‘ময়নাদ্বীপ আবাসন প্রকল্প’ নামক এক প্রকল্পের মালিক সে। তাহার আগমনের উদ্দেশ্য কেতুপুরের বাসিন্দাদেরকে সে কম মুল্যে প্লট কিনিয়া দিবে। এই উদ্যশ্যে হোসেন মিয়া তাহার প্রকল্পের বাহারি বিজ্ঞাপন চালাইতে লাগিল। যেমনঃ ** ‘রাজউক অনুমোদিত ঢাকার সেরা আবাসন প্রকল্প - ‘ময়নাদ্বীপ আবাসন প্রকল্প’। মতিঝিল হইতে বিমানপথে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে পদ্মার চরে গড়ে উঠছে ঢাকার সর্বাধুনিক আবাসন প্রকল্প । ময়নাদ্বিপে থাকা মানে ঢাকা সিটিতেই থাকা।' **
হোসেন মিয়া প্লট বেচিতে পারিল না ঠিকই তবে কেতুপুরে চেম্বার অফ কমার্স নির্বাচন করিয়া বিপুল ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হইলো। বিভিন্ন বিপদে এখন লোকে তাহার কাছে পরামর্শ করিতে আসে।
০৭। রাসুর প্যাচটিনি–২০০০ লিমিটেডঃ
হটাৎ করিয়া রাসুর মাধ্যমে কেতুপুরে প্যাচটিনি-২০০০ লিমিটেডের আগমন ঘটিলো । রাসু তাহার ল্যাপটপের মাধ্যমে সবাইকে দেখাইয়া দিল প্যাচটিনিতে ঢুকিয়া প্যাচ খেলাইয়া কি ভাবে অল্পদিনে প্রতি সপ্তাহে ১২৫০০ টাকা আয় করা যায় । প্যাচটিনিতে ঢুকিতে বেশি ঝামেলার প্রয়োজন নাই । অল্পকিছু টাকা দিয়া কোম্পানির মাধ্যমে বারোখানা গাছ লাগাইতে হইবে । রাসুর কথা শুনিয়া মনে হইলো যে দেশের বৃক্ষের চাহিদা মেটানোর একক দায়িত্ব প্যাচটিনি–২০০০ লইয়াছে ।
প্যাচটিনিতে ঢুকিয়া কিছু গ্রামের কিছু মানুষ দ্রুত বদলাইয়া গেলো । তাহারা লুঙ্গি আর গেঞ্জি বাদ দিয়া শার্ট আর টাই লাহাইয়া প্যাচটিনির গীত গাইতে গাইতে বাকিদের অসহ্য করিয়া তুলিল । অবস্থা এমন দাঁড়াইল যে লোকে তাহাদের দেখিলে ‘পালাও পালাও’ বলিয়া দৌড়াইয়া ডানে-বামে ছুটিতো ।
রাসুর এমন ‘অধপতন’ দেখিয়া কুবের মারাত্নক নাখোশ হইলো । মানুষকে ডুবাইবার এমন পেশা সে ক্যামনে বাছিয়া লইলো ?
কুবের সিদ্ধান্ত লইলো গোপীকে অন্যত্র বিবাহ দিয়া দিবে । রাসুর নিকট সে কিছুতেই গোপীকে তুলিয়া দিবে না । যে ছেলেকে সবাই আড়ালে গালি দেয়, তাহার সাথে কন্যা বিবাহ দেওয়া অসম্ভব।
নেটে অনেক খুজাখুজি করিয়া কুবের গোপীর জন্য একখানা পাত্র নির্বাচন করিয়া গোপীর সাথে তাহার বিবাহ ঠিক করিল। খবর পাইয়া রাসু বাংলা সিনেমার নায়কদের মতো আসিয়া বলিল ‘চৌধুরী সাহেব , আমরা প্যাচটিনি করতে পারি, কিন্তু ছোটলোক নই !' অতঃপর অনেক অনুরোধ করিয়াও রাসু কুবেরের মন গলাইতে পারিল না। । কুবের বলিল ‘মেনে একবার যো কমিটমেন্ট কারদি , উস কি বাদ মে খুদ কা ভি নেহি সুন্তা ।‘
রাসু হুমকি দিয়া গেলো ‘টের পাইবা মাঝি, আমি কি চিজ !’
০৮. গোপীর বিবাহঃ
গোপীর বিবাহ উপলক্ষে কপিলা সপ্তাহ-দশ দিনের জন্য বোনের বাড়িতে আসিল। গর্ভে তাহার আগত সন্তান।
কুবেরের আশংকা ছিল গোপী বিবাহ করিতে অস্বীকৃতি জানাইবে , কিন্তু আদর্শ প্রেমিকার ন্যায় গোপী হাসিতে হাসিতে বিবাহ করিয়া ফেলিল। কুবেরের বুক হইতে যেন পাথর নামিয়া গেলো।
০৯। রাসুর প্রতিশোধঃ
বিবাহের পরদিন কুবের বসিয়া বসিয়া বিবাহ অনুষ্ঠানের সকল ছবি আপলোড করিতে ছিলো। এমন সময় রাসু তাহাকে একখানা ভিডিওতে ট্যাগ করিল। সাথে লিখিল ‘ট্যাগেই প্রকৃত সুখ’ ! ভিডিও দেখিয়া কুবেরর চক্ষু ছানাবড়া !! ঢাকার হোটেলে কুবের ও কপিলার অন্তরঙ্গ মুহুরত রাসু গোপনে ধারন করিয়া ফেসবুকে প্রকাশ করিয়া দিয়াছে। ভিডিও দেখিয়া কুবেরের হৃদকম্পন বন্ধ হইয়া গেলো , ষে তৎক্ষণাৎ ভিডিওতে কমেন্ট দিল ‘অরে লুইচ্ছার লুইচ্ছা , তোর লগে মাইয়া বিয়া না দিয়া আমি উচিত কামই করছি’। সেই ভিডিও কপিলারও হৃদকম্পন বন্ধ করিয়া দিল।
১০. অবশেষেঃ
সব শুনিয়া হোসেন মিয়া বলিলো ‘একবার যখন ভিডিও প্রকাশ হইয়াছে তখন কোন ভাবেই ইহাকে আটকাইয়া রাখা সম্ভব নহে, ‘ব্লু-টুথ মানেনা কোন বাধা !!’ মোবাইলের মাধ্যমে দ্রুত এই ভিডিও সারা দেশে ছড়াইয়া পড়িবে ।
তাই হোসেন মিয়া কুবেরকে পরামর্শ দিল কম মুল্যে ৯৯৯৯ কিস্তিতে ময়নাদ্বিপে প্লট কিনিয়া লওয়ার। নিরুপায় কুবের প্রথম ব্যাক্তি হিসেবে রাজী হইয়া গেলো ।
সে রাত্রেই কুবের ময়নাদ্বিপে যাওয়ার প্রস্তুতি লহিলো । কপিলা তাহার কোন গতি না দেখিয়া কুবেরকে বলিল ‘আমারে নিবা মাঝি লগে?’
কুবের প্রথমে বলিল 'তোমারে না নিয়া উপায় আছে ? তোমার লাইগাই আইজ আমার এই দশা...' পরক্ষনেই কপিলার গর্ভের সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করিয়া বলিল ‘কিন্তু ... তোর পেটে...’
কপিলা মুচকি হাসিয়া বলিলো ... ‘আরে মাঝি , বুঝলানা... মুরগী তোমার ডিমও তোমার !’
অবশেষে দুইজনে মিলিয়া যাত্রা করিলো ময়নাদ্বীপের উদ্দ্যশ্যে... - See more at: http://nasifchy.blogspot.com/2012/11/blog-post_8241.html#sthash.SnzaSShG.dpuf
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)